धर्मो रक्षति रक्षितः। Dharmo Raksati Raksitah.

Dharma protects those who protect it.

– Veda Vyas, Mahabharat

কেন যীশু ধর্মান্তরিতদের উদ্ধার করতে পারবেন না


Source: – Courtesy:- This article was published in Indiafacts.org , written by Kalavai Venkat. / সৌজন্যেঃ এই প্রবন্ধটি ইন্ডিয়াফ্যাক্টস্‌ কর্তৃক প্রকাশিত এবং এটি রচনা করেছেন কালাভাই ভেঙ্কট।

খৃষ্টান ধর্মোন্মাদেরা উন্মত্তের মতো ঘোষণা করে –“যীশু উদ্ধার করবেন!” এই প্রতিবেদনে আমি অকাট্য যুক্তি পেশ ক’রে দেখাবো যে ধর্মান্তরিতদের উদ্ধার করার ক্ষমতা যীশুর নেই। আসুন এই আলোচনা শুরু করা যাকখ্রিস্ট  ধর্মে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি(free will)এবং পূর্বনির্ধারিত নিয়তি (predestination)বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়ে থাকে সেইটি উপলব্ধি করার চেষ্টার মধ্যে দিয়ে।

কেউ যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসেবে মেনে নেবেন কীভাবে – স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বলে নাকি এর সবটাই পূর্বনির্ধারিত? অন্যভাবে বলতে গেলে, নরকে চিরকালের জন্য নিক্ষিপ্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে গেলে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রয়োগ করেই কি তা করা সম্ভব নাকি এটা নেহাতই একটা কাকতালীয় ঘটনা যা ঈশ্বরের (অথবা তাঁর পুত্র যীশুর, যেমনটা ভাবলে আপনার সুবিধে হয়) দিব্য করুণার দ্বারা নির্ধারিত হয়? এই আলোচনায় ঈশ্বর এবং যীশুকে অদলবদল ক’রে ব্যবহার করাই যায় কারণ তাঁরা তো এক এবং অভিন্ন।

স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির স্বপক্ষে কিছু শাস্ত্রীয় যুক্তি রয়েছে। পল নিজের অনুগামীদের তিরস্কার ক’রে বলেছিলেন যে যীশু তাদের যে স্বাধীনতা দিয়েছেন তার উপযুক্ত প্রয়োগ করতে এবং আবার সেইসঙ্গে বলেছিলেন তার অপপ্রয়োগ না করতে; এতে বোঝা যায় যে স্বাধীন ইচ্ছার কিছুটাঅন্ততঃ ভূমিকা রয়েছে। [১] ইরেনাইয়ুস (আনুমানিক ১৮০ খ্রিঃ) আরো সরাসরি বলেছেন –“মানুষ বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন, তাই সে ঈশ্বরের ন্যায়; তাকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ক’রে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সে তার নিজ কর্মের নিয়ন্তা”। [২] অরিগেন (১৮৪-২৫৩ খ্রিঃ) পুনর্জন্মে বিশ্বাস করতেন এবং খ্রিস্ট  ধর্মের পক্ষে সবচেয়ে সুসংহত যুক্তিটির (অর্থাৎ সে যুক্তিটি একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যেই শুধুমাত্র সঙ্গত শোনায়, কারণ তাঁর যুক্তি কখনোই এটা ব্যাখ্যা করে না যে কেন জন্মমৃত্যুর চক্রকে একটি অনন্ত স্বর্গীয় অথবা নারকীয় জীবনের মধ্যে লয় হতে হবে এবং এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়, সঠিকও নয়) অবতারণা করে বলেছিলেন যে পূর্ব পূর্ব জীবনের কর্মের মাধ্যমেই মানুষের স্বর্গ অথবা নরকবাস নির্ধারিত হয়। [৩]

কেন অরিগেন একইসাথে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং পূর্বনির্ধারিত নিয়তির কথা বলেছেন? খ্রিস্ট  ধর্মে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির ধারণাটিকে চিরকালই কোণঠাসা ক’রে রাখা হয়ে এসেছে, যে ধর্ম জগতের চূড়ান্ত বিনাশের তত্ত্ব প্রচার করে। এর ফলে খ্রিস্ট  ধর্মে ব্যক্তিস্বাধীনতার চাইতে নিয়তির লেখনকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই কারণে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে এই ধর্মে চিরকাল দৈব ইচ্ছার প্রতিস্পর্ধী হিসেবে দেখা হয়। হিপ্পো প্রদেশের অগাস্টিন (আনুমানিক ৪২৬ খ্রিঃ) জোরের সঙ্গে জানাচ্ছেন যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বিষয়টি তাঁর সমকালে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তিনি এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন তাঁর রচিত “অন গ্রেস অ্যান্ড ফ্রী উইল” গ্রন্থে।

খ্রিস্টীয় শাস্ত্রে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বিষয়টির উল্লেখ যে বিরল সে সম্পর্কে অগাস্টিন অবগত ছিলেন। তাই, ঈশ্বর নিজে শাস্ত্রে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির ধারণাটি প্রকাশ করেছেন এমন কথা জোরের সঙ্গে জানালেও তিনি এর সঙ্গে একটি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ জুড়ে দিয়েছিলেন –এই ধারণাটি মানুষের ভাষায় নয়, বরং দৈবী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।এতৎসত্ত্বেও, তিনি এই সতর্কীকরণ শীঘ্রই ভুলে গিয়ে জন (যোহন) ১৫:২২–এর উল্লেখ ক’রে পরোক্ষে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সপক্ষে যুক্তি দেখান। এই পঙক্তিগুলিতে যীশু মানুষের পক্ষে একদম সহজবোধ্য ভাষায় জানাচ্ছেন যে যেহেতু তিনি ইহুদীদের কাছে নিজেকে প্রকাশিত করেছেন (যারা এযাবৎ নিস্পাপ ছিল) তাই তারা পাপের উত্তরাধিকারী হবে যদি তারা যীশুকে অনুসরণ না করে। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জন (যোহন) ১৫:২২-এর রচয়িতা, যিনি বোঝাচ্ছেন যে উল্লিখিত ইহুদীরা আদি পাপ নিয়ে জন্মায়নি, তিনি জানতেন না রোমান্‌স্‌ (রোমীয়) ৫:১২-এর রচয়িতা কী লিখে গেছেন – যে আদম থেকে শুরু ক’রে সকলেই আদি পাপ নিয়ে জন্মেছে। তাই, তিনি অজ্ঞাতসারে খ্রিস্ট ধর্মের মূল ভিত্তিটিকে খারিজ ক’রে দিয়েছেন। অগাস্টিন প্রভার্ব্‌স্‌ (হিতোপদেশ) ১৯:৩-এর উল্লেখ ক’রেআরো যে যুক্তিটি দেখিয়েছেন তা হ’ল, একজন পাপী এই ব’লে শাস্তি এড়াতে পারবে না যে তার কর্ম পূর্বনির্ধারিত, কারণ তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। তিনি ম্যাথিউ (মথী) ১৬:২৭-এর উল্লেখ ক’রে আরো বলেন যে “যীশু প্রত্যেক মানুষকে তার কর্ম অনুসারে ফল প্রদান করবেন”, যা আসলে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সপক্ষে তাঁর একটি যুক্তি।

এরপর তিনি এই ব’লে সাবধান ক’রে দিয়েছেনযে কেউ যেন দৈব কৃপাকে নাকচ ক’রেস্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে বরণ  না করে এবং তিনি দৈব কৃপার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত নিয়তির সপক্ষে যুক্তি সাজিয়েছেন। এখন আলোচনা করা যাক কীভাবে পূর্বনির্ধারিত নিয়তির মাধ্যমে উদ্ধারলাভ সম্ভব।

একজন শিশু, যে খ্রিস্টান মা-বাবার ঘরে জন্মেছে, সে দীক্ষা না নিয়েই মারা গেলে তার কী গতি হয়? তাদেরই বা কী গতি হয়েছিল যাঁরা যীশুর আগে জন্মেছিলেন?এঁরা কি নরকে গেছেন?এই শ্রেণির লোকেরা তো স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বলে যীশুকে নিজেদের উদ্ধারকর্তা হিসেবে মেনে নেবার সুযোগ পাননি। কোনোসুযোগ না দিয়ে কাউকে নরকে নিক্ষেপ করাটা কি ন্যায্য? পূর্বনির্ধারিত নিয়তি হ’ল একদিকে এইসব নীতিগত প্রশ্নের জবাব, যেসব প্রশ্ন গোড়ার দিকে খ্রিস্টানদের ব্যতিব্যস্ত ক’রে তুলেছিল, আবার অন্যদিকে এটি মানুষের ভূমিকা এবং কর্মচেষ্টার বদলে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বড় ক’রে দেখানোর খ্রিস্টান প্রবণতার ফলও বটে।

খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষা দেয় যে মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়াই কেবলমাত্র ঈশ্বরের কৃপায় অনন্ত নরকবাসের হাত থেকে উদ্ধার পেতে পারে। অন্যভাবে বলতে গেলে, মানুষ স্বর্গে যাবে না নরকে তা ঈশ্বরের কৃপাতেই পূর্ব থেকে নির্ধারিত হয়ে আছে। বলা হয় যে যীশু একজন অপরাধীকে উদ্ধার করেছিলেন, যাকে তাঁর সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, যদিও সে যীশুর প্রতি নিজের আস্থা জ্ঞাপন করেনি। [৪] একজন ইথিওপিয়ান নপুংসক [৫] অ্যাপোস্টল পল, [৬] এবং ফিলিপীয় কারাপাল [৭] – এরাও যীশুর প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করবার আগেই যীশু তাদের উদ্ধার করেছিলেন। আঙুরখেতের শ্রমিকদের নিয়ে যে নীতিগল্পটি [৮] রয়েছে,সেখানে যীশু ঘোষণা করেন যে “যারা একেবারে শেষে (তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে) তারা সবার আগে (উদ্ধার পাবে)” এবং যেহেতু যীশু হলেন সকল মানুষের প্রভু, তাই তিনি তাদের সঙ্গে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন, অর্থাৎ তিনি ইচ্ছেমত তাদের কাউকে পরিত্রাণ করতে পারেন আর অন্যদের নরকের আগুনে দগ্ধ হতে দিতে পারেন এবং তাদের প্রাপ্ত ফলের সঙ্গে তাদেরকৃতকর্মের সামঞ্জস্য না-ই থাকতে পারে। এর থেকে যে সিদ্ধান্তে আসা যায় তা হ’ল কোনো ব্যক্তি নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলেও পূর্বনির্ধারিত নিয়তি অনুযায়ী যীশুর কৃপায় পরিত্রাণ পেতেই পারে।

অগাস্টিনও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির তুলনায়কৃপার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত নিয়তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, যখন তিনি ম্যাথিউ (মথি) ২৬:৪১ থেকে উদ্ধৃত করে দেখাচ্ছেন যে একমাত্র ঈশ্বরের কৃপা পেলেই মানুষ প্রলোভনের ফাঁদে পড়া এড়াতে পারে। বিভিন্ন গোঁড়া খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় পূর্বনির্ধারণবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে শব্দের অর্থ নিয়ে চুলচেরা পার্থক্য করলেও তাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যার মধ্যে বিশেষ কোনো ফারাক নেই।

তবে, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং পূর্বনির্ধারিত নিয়তির মতো সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী দুটি তত্ত্ব যে শাস্ত্রের দ্বারা অনুমোদিত, সে ব্যাপারটা কিছু খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্ববিদের দৃষ্টি এড়ায়নি। অগাস্টিন এবং থমাস আকুয়াইনাসের কৈফিয়তগুলিই এই পরস্পরবিরোধী ধারণাগুলির মধ্যে খ্রিস্টানদের সমন্বয় স্থাপন করবারচেষ্টার উদাহরণ।

অগাস্টিন শুরু করেন জাকারিয়া (সখরিয়) ১:৩ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে, যেখানে ঈশ্বর বলছেন “তুমি আমার দিকে এলে আমি তোমার দিকে যাবো”, এবং তিনি যুক্তি দেখান যে এখানে মানুষের ঈশ্বরের প্রতি উন্মুখ হওয়া স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে চিহ্নিত করে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ঈশ্বরের মানুষের প্রতি উন্মুখ হওয়া সূচিত করে ঈশ্বরের কৃপাকে। তবে এর সঙ্গে তিনি শীঘ্রই জুড়ে দেন যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বলে মানুষের কৃত কর্ম অনুযায়ী সে ঈশ্বরের কৃপাপ্রাপ্ত হয় এমনটা দাবী করা একটি গর্হিত অন্যায়, এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন যে মানুষ ঈশ্বরের প্রতি উন্মুখ হয় ঈশ্বরের কৃপাতেই। এই দাবীটিকে আরো জোরদার করতে তিনি করিন্থীয় (করিন্থিয়ান্স) ১৫:৯-১০ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যেখানে পল আমাদের জানান যে তিনি যে সময় ঈশ্বরের কৃপা প্রাপ্ত হয়েছেন তখনও তিনি খ্রিস্টানদের উৎপীড়ন করছিলেন। তিনি আবারও পলকে উদ্ধৃত করে বলেছেনযে “তাঁর সুখবর প্রচারের জন্য আমার সঙ্গে কষ্টভোগ কর। ঈশ্বরই আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন এবং পবিত্রভাবে জীবন যাপন করবার জন্য ডেকেছেন। আমাদের কোনো কাজের জন্য তিনি তা করেন নি, বরং তাঁর উদ্দেশ্য এবং দয়ার জন্যই করেছেন। এখন আমাদের উদ্ধারকর্তা খ্রিস্ট যীশুর এই জগতেআসবার মধ্যে দিয়ে তিনি সেই দয়া প্রকাশ করেছেন”।[৯]অন্যভাবে বলতে গেলে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আসলে ঈশ্বরের কৃপার ফল। অগাস্টিন বোঝেননি যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির দ্বারা কৃত কর্ম যদি পূর্ব হতেই নির্ধারিত হয়ে থাকে তাহলে সেটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিই নয়। আমি জানি না অগাস্টিন এমন মন্তব্য করবার সময় “দৈবী ভাষায়” কথা বলছিলেন কিনা। এরপর অগাস্টিন অর্থহীন অসংলগ্ন কথাবার্তা শুরু করেন, যেমন “অনন্ত জীবন হ’ল কৃপার জন্য কৃপা” ইত্যাদি বাক্যবন্ধ। [১০]

কিছু খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্ববিদ্‌ ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং পূর্বনির্ধারিত নিয়তি – এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় আনা অসম্ভব এবং এরা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। ধরা যাক আপনি নরকে যাবেন এমনটাআগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। কিন্তু, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির কারণে আপনি যীশুকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির দ্বারাই কৃত কর্মের ফলস্বরূপ স্বর্গলাভের অধিকারী হলেন। এই ঘটনাচক্র পূর্বনির্ধারণবাদকে একেবারে নস্যাৎ এবং নাকচ ক’রে দেবে। এটা বুঝতে পেরেই থমাস আকুয়াইনাস সেই চিরাচরিত খ্রিস্টীয় মতবাদটির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন যা বলে যে প্রতিটিব্যক্তির জন্য স্বর্গ অথবা নরক আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির দ্বারা কৃত কাজের ফলে এতে কোনো হেরফের হয় না। অরিগেনের মতটি, যা আমরা একটু আগেই জেনেছি, সেটিও তিনি খারিজ করেন পলকে উদ্ধৃত ক’রে – রোমীয় (রোমান্স) ৯:১১-১২ তে পল বলছেন যে জন্মেরও আগে মানুষের ভাগ্য ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে যায়, মানুষের কৃত কর্মের উপরে তা নির্ভর করেনা। এর দ্বারা আকুয়াইনাস অনবধানতাবশতঃ ম্যাথিউ (মথী) ১৬:২৭–তে যীশুর দেওয়া এই প্রতিশ্রুতিটিকে খারিজ করে দিয়েছেন যে তিনি প্রত্যেক মানুষকে তার কৃত কর্ম অনুযায়ী ফলদান করবেন।আকুয়াইনাস এরপরে নিজস্ব ঢঙে একটি উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির দ্বারা কৃত কর্মগুলি আগে থেকেই পূর্বনির্ধারিত, যা “পরিকল্পিত স্বতঃস্ফূর্ত কাজ”-এর মতোই একটি স্ববিরোধী বিবৃতি।[১১]

আকুয়াইনাস একজন মাঝারি মানের দার্শনিক এবং খুব খারাপ তার্কিক হয়ে থাকতে পারেন কিন্তু স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বদলে পূর্বনির্ধারণবাদকে তাঁর প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থানটি বাইবেল কর্তৃক সমর্থিত। নিচের পঙক্তিগুলি তার নিদর্শন –

১। “ এই বিশ্বের সৃষ্টি হবার আগেই যীশু তাঁর দৃষ্টিতে পবিত্র এবং নিষ্পাপ হিসেবে আমাদের নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছেন। প্রেমের প্রেরণায়যীশু খ্রিস্টের মাধ্যমে তিনি আমাদের পুত্রত্বে বরণ করবার জন্য পূর্ব হতেই নির্ধারিত করেছেন, তাঁর আনন্দ ও ইচ্ছার কারণে।” [১২]

২। “কারণ কৃপার বশেই তুমি উদ্ধারলাভ করেছ, বিশ্বাসের বলে – তোমাদের নিজেদের কৃত কর্মের কারণে নয়, এটি ঈশ্বরের দেওয়া উপহার।” [১৩]

৩। “যাদের তিনি আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন তাদের তিনি ডাকও দিলেন; যাদের ডাক দিলেন তাদের তিনি নির্দোষ বলে গ্রহণও করলেন; যাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন তাদের তিনি নিজের মহিমাও দান করলেন” [১৪]

৪। “ঈশ্বরই আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন এবং পবিত্রভাবে জীবন কাটাবার জন্য ডেকেছেন। আমাদের কোন কাজের জন্য তিনি তা করেন নি, বরং তাঁর উদ্দেশ্য এবং দয়ার জন্যই করেছেন।” [১৫]

অগাস্টিন এবং আকুয়াইনাসের মতো খ্রিস্ট ধর্মের হয়ে কৈফিয়তপ্রদানকারীরা কথার জাল বুনতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং অযৌক্তিক সব বিবৃতি দিয়েছিলেন কারণ তাঁরা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং পূর্বনির্ধারণবাদের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করবার মতো একটা অসম্ভবকে সম্ভব করবার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা এটা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কেন তাঁদের শাস্ত্রে মুক্তির পথ হিসেবে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং পরস্পরবিরোধী উপায় বাতলানো হয়েছে।অনবধানতাবশতঃ তাঁরা পূর্বনির্ধারণবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে খারিজ করে দিয়েছেন।

পূর্বনির্ধারণবাদ খ্রিস্ট ধর্মের মূল কথা অর্থাৎ মানুষের যীশুর প্রতি বিশ্বাস জ্ঞাপনের প্রয়োজন আছে এই মূল তত্ত্বটির গোড়ায় মারাত্মক আঘাত হানে। তার কারণ হচ্ছে এই –কোনো শিশুকে (অথবা প্রাপ্তবয়স্ককে)আগে থেকেই স্বর্গ অথবা নরকে যাবার জন্য নির্ধারিত ক’রে রাখতে হ’লে যীশুকে সর্বদর্শী হতে হয়। সেক্ষেত্রে কোনোকিছু, এমনকী যীশুর মতো সর্বশক্তিমানেরও সাধ্য নেই যে সেই ব্যক্তির ভাগ্য পরিবর্তন করে। যদি যীশু তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ ক’রে কোনো ব্যক্তির ভাগ্য পরিবর্তন করে দেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে তিনি সত্যিকারের সর্বদর্শী নন কারণ তিনি আগে থেকেই যা জানতেন তার অন্যথা ঘটে গেছে। যীশুকে যদি সর্বজ্ঞ হতে হয়, যা কিনা পূর্বনির্ধারণবাদের একটি অত্যাবশ্যক শর্ত, তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান হ’তে পারেন না। এর অর্থ হ’ল আপনার বিশ্বাসের কারণে যীশু আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন না।

কাজেই, আপনি স্বর্গে যাবেন না নরকে যাবেন সেটা আপনার যীশুকে নিজের পরিত্রাতা হিসেবে মেনে নেওয়া বা না নেওয়ার উপরে নির্ভর করে না।অন্যভাবে বলতে গেলে, যীশুর প্রতি আপনার বিশ্বাস জ্ঞাপন করাটা একেবারে অপ্রয়োজনীয়। আপনি যীশু অথবা পবিত্র আত্মার (হোলি স্পিরিট) বিরুদ্ধে জঘন্যতম অবমাননা প্রকাশ করলেও তার ফলাফল নিয়ে একেবারেই চিন্তা করতে হবে না কারণ যীশু এমনিতেই আগে থেকে অপরিবর্তনীয়ভাবে আপনার ভাগ্য নির্ধারণ ক’রে রেখেছেন যে আপনি স্বর্গে যাবেন না নরকে!আর তার সঙ্গে আপনি এটাও জানলেন যে যীশু যে সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান সেই প্রচলিত খ্রিস্টীয় দাবিটিও কতটা মিথ্যে!

[১] গালাতীয় ৫:১

[২] এগেন্‌স্ট হেরেসীজ ৪:৪:৩

[৩]http://www.newadvent.org/summa/1023.htm

[৪] লূক ২৩:৪৩

[৫] প্রেরিত (অ্যাক্ট্‌স্‌) ৮:২৬-৩৯

[৬]ঐ ৯:১৮

[৭] ঐ ১৬:২৫-৩৩

[৮] মথী ২০:১-১৬

[৯] ২ তীমথিয় (টিমোথি) ১:৮-৯

[১০] সেন্ট অগাস্টিন – অন গ্রেস অ্যান্ড ফ্রী উইল, কিন্ডল লোকেশন ২, ১০, ৩৩, ১৪১, ১৫৩, ১৬৪, ১৭৬, ১৯৬-১৯৮, ২৭৯-২৮১, ৩০৬

[১১] http://www.newadvent.org/summa/1023.htm

[১২] ইফিষীয় (ইফেসিয়ান্স) ১:৪-৫

[১৩]ঐ ২:৮

[১৪] রোমীয় (রোমান্স) ৮:৩০

[১৫] ২ তীমথিয় (টিমোথি) ১:৯

“হোয়াট এভ্‌রি হিন্দু শুড নো অ্যাবাউট ক্রিশ্চিয়ানিটি” থেকে গৃহীত।

সঙ্গের ছবিটি  timaborges.wordpress.comথেকে গৃহীত

বিশেষ বিজ্ঞপ্তি: এই নিবন্ধে প্রকাশিত ঘটনা এবং মতামত লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। এই প্রবন্ধে কোনও তথ্যের সঠিকতা, সম্পূর্ণতা, উপযুক্ততা বা বৈধতার জন্য ইন্ডিয়া ফ্যাক্টস্‌ কোন দায়িত্ব বা দায় গ্রহণ করবে না।

support@sarayutrust.org

Discover more from Way Of Dharma: Yoga, Meditation and Hinduism

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading